আজ বুধবার, ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যে সড়কে নিত্য জ্যাম

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
যানজট নিত্য বিষয় হয়ে উঠেছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কে। এক সময়ে শুধু পঞ্চবটি মোড়ে জ্যাম থাকলেও এখন তা বিস্তৃত হয় অনেক দূর পর্যন্ত। যানজটে ভোগন্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে আর এ জ্যাম থেকেই টাকা কামিয়ে নেয় কেউ কেউ। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সড়কে কয়েকজন পণ্য মাপার স্কেল বসিয়ে, যমুনা ও মেঘনা ডিপোর সামনে রাস্তায় গাড়ি রেখে, পঞ্চবটি মোড়, ফতুল্লা থানা গেট সহ সড়কের অনেক জায়গায় অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে যানজট সৃষ্টি করছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও প্রশাসন অধিকাংশ সময় নীরব থাকে।

একসময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা আসা যাওয়া করতে একমাত্র সড়ক ছিলো যা নারায়ণগঞ্জ-পাগলা-ঢাকা রুট নামে পরিচিত। এ সড়কে পঞ্চবটি মোড় হয়ে মুন্সিগঞ্জ-ঢাকা যাত্রিবাহী বাস চলাচল করে। এছাড়া বিসিক শিল্পনগরী, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল, মুক্তারপুরের অসংখ্য সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর গাড়ি যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষও এ রোড ব্যবহার করে। তাদের নির্বিঘœ চলাচলে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় যানজট। পঞ্চবটি মোড় থেকে শুরু হয়ে পাগলা পর্যন্ত তীব্র যানজটের কারণে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। প্রায় নিত্যদিনের এ জ্যাম ছড়িয়ে পড়ে অনেক দূর পর্যন্ত। কখনও কখনও তা জামতলা আর ওদিকে চলে যায় মুন্সিখোলা পর্যন্ত।

অনুসন্ধানে এখানকার যানজটের বেশ কয়েকটি কারণ বেরিয়ে আসে। পঞ্চবটি মোড়ের যানজটের মূল কারণ চৌরাস্তা। এ মোড় থেকে একটি রাস্তা চলে গেছে চাষাঢ়ার দিকে উল্টো দিকে ফতুল্লা। আরেকটি রাস্তা চলে মুন্সীগঞ্জের দিকে। আবার এ মোড় থেকেই ধর্মগঞ্জ যাওয়ার আরেকটি রাস্তা রয়েছে। ফলে চারদিক থেকে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রাইভেটকার পঞ্চবটি মোড়ে এসে মিলিত হয়। ফলে গাড়ির চাপ বেড়ে যায় এতে বাধ্য হয়েই যানবাহনের গতি কমে যায়। এখানকার যানজটের আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড। মোড়কে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বোরাক পরিবহনের স্ট্যান্ড। এছাড়া এ মোড়েই রয়েছে অবৈধ সিএনজি ও অটো রিকশা স্ট্যান্ড। মোড় জুড়ে অবৈধ দোকানপাটেরও অভাব নেই। স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর এ মোড়ে জ্যাম লেগে থাকে।
পঞ্চবটির মোড়ের অদূরেই রয়েছে যমুনা ও মেঘনা অয়েল ডিপো। এ দু’টি ডিপোর সামনে রাস্তায় অসংখ্য জ্বালানীতেলবাহী গাড়ি দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে। এ ডিপো দু’টির মাঝখানেই এবি ব্রিজ নামের একটি পণ্য মাপের স্কেল রয়েছে। ফতুল্লার সরকার বাড়ির দিদার সরকারের মালিকানাধীন এ স্কেলের সামনে পণ্য মাপতে আসা গাড়ি ঘোরানোর ফলে সড়কের দুই পাশের গাড়ি আটকে দেয়া হয়। এ জন্য দিদার সরকারের বেতনভুক্ত কয়েকজন সারাক্ষন লাঠি হাতে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। ফতুল্লা মডেল থানা থেকে শুরু করে গরুর হাট পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে অবৈধ দোকান বসিয়ে চাঁদা নেয় কয়েকজন ক্ষমতাবান মানুষ। এসব দোকান সড়কের অনেকাংশ দখল করে। দাপা বালুরঘাঁট এলাকায় রাস্তার দুপাশে পাথর, ইট, বালির দোকানে ভরা। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনেই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে রাস্তা এতটাই সরু হয় যে পাশাপাশি দুটো বাস অনায়াসে চলতে পারে না। পাশেই নদী। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীপথে ইট, পাথর আর বালু এসব দোকানে আসে। এখানে ইট আর পাথর ভেঙে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তাদের অভিযোগ এসব ট্রাক যখন রাস্তায় নামে বা দিক পরিবর্তন করে তখনই জ্যামের সৃষ্টি হয়।
পাগলা বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনেই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। স্থানীয়রা জানান, ট্র্রাকের কারণে সৃষ্ট জ্যাম রাস্তা দুদিকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং এই জ্যাম ছুটতে ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। পাগলা রেলস্টেশনে যেতে কাঁচা রাস্তাতেও জ্যামের সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার সরু রাস্তা দিয়েও ট্রাক চলাচল করে। ট্রাক এ রাস্তায় একবার ঢুকলে রিকশাও যেতে পারে না। ফলে এখানকার এই জ্যামের প্রভাব গিয়ে পড়ে মূল রাস্তায়।
প্রতিদিন এমন যানজট থাকলেও প্রশাসন কালেভদ্রে ব্যবস্থা নেয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের। অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ, অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ মাঝে মধ্যে হলেও বছর জুড়েই এসব রাস্তা দখল করে রাখে। এতে দুর্ভোগ বাড়ে অসংখ্য মানুষের আর লাভবান হয় কেউ কেউ।